Adsterra

যশোরে যুবলীগ কর্মী হত্যা: ৪০ সেকেন্ডের কিলিং মিশনে অংশ নেয় ‘পরিচিত’ ২ জন

যশোরে যুবলীগ কর্মী হত্যা, ৪০ সেকেন্ডের কিলিং মিশনে অংশ নেয় পরিচিত ২ জন,  ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot


যশোর সদরের বাহাদুরপুর এলাকার তেঁতুলতলা মোড়ে যুবলীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যায় অংশ নেয় দুই দুর্বৃত্ত। আলী হোসেন (৩০) নামের ওই যুবলীগ কর্মী তাঁর এক সহযোগীকে নিয়ে বাসার অদূরের মোড়ে মোটরসাইকেলের ওপর বসে ছিলেন। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে দুই দুর্বৃত্ত এসে তাঁদের পেছনে দাঁড়ায়। ওই বাইকের পেছনে বসে থাকা ব্যক্তি পিস্তল দিয়ে আলী হোসেনকে গুলি করে। প্রথম গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে যুবলীগ কর্মী ও তাঁর সহযোগী পালানোর চেষ্টা করেন। দৌড়ে গিয়ে গুলি করলে তাঁর পায়ে লাগে। তাতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর কাছে গিয়ে প্রথমে মাথায় দুটি ও পিঠে তিনটি গুলি করে মৃত ভেবে তারা পালিয়ে যায়।


এসব ঘটনা ঘটেছে ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে ছয়টি গুলি। নিহত যুবলীগ কর্মীর সহযোগী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।


গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে আলী হোসেন হামলার শিকার হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি সদর উপজেলার বাহাদুরপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে। তিনি যুবলীগের কোনো পদে না থাকলেও স্থানীয় জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী যশোর পৌরসভার কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমনের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। এ ঘটনায় আজ শনিবার বিকেল পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ।


থানা-পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার অনুষ্ঠিত সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদ চাকলাদারের কর্মী ছিলেন আলী হোসেন। তৌহিদের বিজয় উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাতে উপশহরের ই-ব্লক এলাকায় প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। ওই আয়োজন শেষে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা আলী হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে।

 

পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, আলী হোসেন মাটির ব্যবসা করতেন। ব্যবসা নিয়ে তাঁর সঙ্গে পাশের কিসমত নওয়াপাড়া গ্রামের সাবেক চরমপন্থী ও বর্তমানে বিএনপির কর্মী নবাব তাঁকে গুলি করে হত্যা করেন। নবাবের সঙ্গে বিরোধ ছিল আলীর। কয়েক দিন আগে উপশহর এলাকায় প্রকাশ্যে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। সেই বিরোধের জেরে নবাব তাঁর লোকজন নিয়ে আলী হোসেনের ওপর হামলা চালান। পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশ করলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করেনি।

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই  আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য    বই সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই  আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য

  বই সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন


গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা ময়নাতদন্ত শেষে স্থানীয় কবরস্থানে আলী হোসেনের লাশ দাফন করা হয়। আজ শনিবার দুপুরে বাহাদুরপুর এলাকায় আলী হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িতে এখনো স্বজনদের ভিড়। দূরদূরান্ত থেকে স্বজন ও এলাকাবাসী তাঁদের বাড়িতে শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছে। বাড়িতে অবস্থান করছিলেন আলী হোসেনের দীর্ঘদিনের সহযোগী ও হত্যার সময় সঙ্গে থাকা সোহান হোসেন শেখ। তিনি বলেন, ‘আমরা উপজেলা নির্বাচনে মোটরসাইকেলের কর্মী ছিলাম। বিজয়ী হওয়ার পর উপশহরে ই-ব্লকে পিকনিকের আয়োজন করা হয়। ওখান থেকে খাওয়াদাওয়া করে আলী হোসেন ও আমি মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলাম। আলী বাইক চালাচ্ছিল, আমি পেছনে বসে ছিলাম। বাড়ি ফেরার পথে লক্ষ করি, এক বাইকে দুজন আমাদের ফলো করছে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ির সামনে মোড়ে পৌঁছাতেই পেছন থেকে ওই বাইক থেকে নামেন কিসমত নওয়াপাড়া গ্রামের নবাব আলী। তিনি প্রথমে গুলি ছুড়লে আমরা পালাতে শুরু করি। প্রথম গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। আবার গুলি ছুড়লে আলী হোসেনের পায়ে লাগলে তিনি পড়ে যান। এরপর নবাব কাছে এসে প্রথমে মাথায় দুটি, পরে পিঠে তিনটি গুলি করে পালিয়ে যায়। আমি চিৎকার করলে স্থানীয়দের মাধ্যমে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান।’


বাড়ির সামনের রাস্তায় কথা হয় আলী হোসেনের বয়স্ক বাবা আব্দুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। দুই মেয়েকে ও বিয়ে দিয়েছে। বাড়ির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি চলে যাওয়ায় আমাদের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আলীর কোনো ছেলেমেয়ে নেই। আট মাস হয়েছে বিয়ে করেছে। এলাকায় ব্যবসা ও সালিস বিচার নিয়ে কারও কারও সঙ্গে দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। কিছুদিন আগে নবাব ও তার সহযোগী সিরাজ, টুকুনের সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয়। সেই দ্বন্দ্বের কারণেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।’


আলীর স্ত্রী লুপা খানম বলেন, ‘অল্প বয়সে আমারে যারা বিধবা করেছে, তাদের বিচার চাই। আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। এই হত্যায় আমাদের পরিবারডা পঙ্গু হয়ে গেল।’


প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে যশোর ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘মোট ছয়টি গুলি করা হয় আলীকে। এর মধ্যে পাঁচটি তাঁর শরীরে বিদ্ধ হয়। আপাতত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুজনকে খুঁজছি। কাউকে এখনো আটক করা যায়নি।’


এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে আলী হোসেনের বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জেরে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আজ বিকেল পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে মামলা প্রক্রিয়াধীন। নিহত আলী হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, মারামারি ও দ্রুত বিচার আইনে চারটি মামলা রয়েছে।


এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। তিনি বলেন, ‘যশোরে নির্বাচনের সময় নিহত হওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক। এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তারা আমাদের দলের কেউ না। এসব ঘটনার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’

No comments

Powered by Blogger.